আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা
(১) নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচি ‘জয়িতা’
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় বর্তমান সরকারের তিন বছরের সাফল্যজনক কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ধানমন্ডিস্থ রাপা প্লাজার ৪র্থ ও ৫ম তলায় স্থাপিত ‘জয়িতা’বিপণন কেন্দ্র । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিগত ১৬-১১-২০১১ তারিখ হোটেল রূপসী বাংলা থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জয়িতার কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং জয়িতার লগো উন্মোমচন করেন।
পটভুমিঃ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় সারা দেশে তৃণমূল পর্যায়ে ১৬০০০ এর অধিক নিবন্ধিত স্বেচছাসেবী মহিলা সমিতি রয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের এ সকল সমিতির সদস্যদের মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তা রয়েছে। পর্যাপ্ত ও অনুকুল নারী বান্ধব অবকাঠামো না থাকার কারণে তৃণমূল পর্যায়ের ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তাগণ তাদের সমিতির সদস্যদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বাজারজাতকরণে কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারতেন না। এ সমসত্ম নারী উদ্যোক্তাগণ তাদের পন্য বা সেবা বিপণনে যথেষ্ট অভিজ্ঞ নন। ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তাদেরকে তাদের উৎপাদিত পন্য বা সেবা বাজারজাতকরনের জন্য মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীদের উপর নির্ভর করতে হয়। ফলে নারী উদ্যোক্তারা পূর্ণাঙ্গ সুফল ভোগ করতে পারতেন না এবং উদ্যোগগুলি টেকসই হত না।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বিপণন এবং বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে জয়িতার মাধ্যমে একটি নারী উদ্যোক্তা বান্ধব আলাদা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে সারা দেশ ব্যাপী গড়ে তোলার প্রয়াস নেয়া হয়েছে। এতে করে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে গতি সঞ্চারিত হবে; নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে; নারী ও পুরুষের বৈষম্য হ্রাস পাবে। সর্বোপরি নারীর ক্ষমতায়ন এবং পর্যায়ক্রমে দেশের দারিদ্র বিমোচন হবে।
পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাঃ জয়িতা বিপণি কেন্দ্রের একটি সাধারণ পর্ষদ রয়েরছ। এককালীন অফেরতযোগ্য নির্দিষ্ট পরিমাণ চঁাদা জমা দিয়ে নিবন্ধনকৃত স্বেচছাসেবী মহিলা সমিতি সাধারণ পর্ষদের সদস্য হবেন। পর্ষদ জয়িতার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও বাসত্মবায়ন কৌশলের সাথে সংগতিপূর্ন একটি পূর্নাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করবে। ন্যূনতম বছরে দুইবার সাধারণ পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ পর্ষদ বাৎসরিক কর্ম পরিকল্পনা, বাজেট অনুমোদন করবে এবং কর্মপরিকল্পনা বাসত্মবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন করবে। সাধারণ পর্ষদের ২/৩ অংশ সদস্যের সম্মতিক্রমে নীতিমালায় যে কোন মৌলিক পরিবর্তন/পরিবর্ধন/ পরিমার্জন করা যাবে।
জয়িতা বিপণি কেন্দ্রের নয় সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ রয়েছে। তনমধ্যে ছয় জন সদস্য সাধারণ পর্ষদের সদস্যদের ভোটে এক বছরের জন্য নির্বাচিত। অবশিষ্ট তিন জন পরিচালনা পর্ষদের সদস্য যথা: মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িতেব নিয়োজিত মাননীয় মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, উক্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অফিসিয়াল সদস্য হিসেবে সংযুক্ত হবেন। এই তিনজন আরবিট্রেটরী হিসেবেও দায়িতব পালন করবেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী পদাধিকার বলে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপার্সন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ভাইস-চেয়ারপার্সন ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরিচালনাপর্ষদের সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িতব পালন করবেন।
গতিশীলতার সাথে জয়িতা পরিচালনার জন্য একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ৪জন পরামর্শক সমন্বয়ে একটি নির্বাহী পর্ষদ রয়েছে। তারা জয়িতার বিপণি কেন্দ্রের সার্বিক পরিচালনায় দৈনন্দিন নির্বাহী দায়িতব পালন করবেন।
Cheif Executive Officer (CEO) ও ৪ জন পরামর্শকগণের দায়িতব জয়িতার Brand Image গড়ে তোলা ও Profit Maximization করা।
Corporate culture অনুসারে বিপণি কেন্দ্র পরিচালিত হবে। পণ্যের গুনগত ও নান্দনিক মান নিয়ন্ত্রণ, সাশ্রয়ী মূল্য, গ্রাহক সেবা ইত্যাদির উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বদান করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করাই জয়িতা-র মূল লক্ষ্য।
অবকাঠামোগত অবস্থাঃ নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ধানমন্ডিস্থ রাপা পস্নাজার ৪র্থ ও ৫ম তলায় স্থাপিত ‘জয়িতা’ বিপণন কেন্দ্রে ১৩৯টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে যা ১৮০টি সমিতির মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ১৩৯টি ষ্টলের মধ্যে ১০টি দেশীয় খাবার স্টল, ৬টি কৃষি পণ্য ও ১২৩টি হসত্মশিল্পজাত পণ্যের স্টল রয়েছে। ৫ম তলায় একটি বিনোদনের জন্য একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ রয়েছে। যেখানে দেশীয় ও ঋতু ভিত্তিক পালা পার্বন এবং সাংস্কৃতিক আচার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে । ৫ম তলায় শিশুদের জন্য একটি চিলড্রেন কর্ণার রয়েছে। ৫ম তলায় জয়িতার একটি প্রশাসনিক অফিস ও সভা কক্ষ রয়েছে। উদ্যোক্তা এবং সেলস্ গার্লদের জন্য নামাজের স্থান রয়েছে।
বাণিজ্যিক লিংকেজঃ পণ্য যোগানের ক্ষেত্রে তৃণমূল পার্যায়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত সমিতি মহিলারাও ধীরে ধীরে জয়িতার সাথে সম্পৃক্ত হচেছন। বাজার ব্যবস্থা সম্প্রসারণে একজন মার্কেটিং কনসালট্যান্ট কাজ করছেন। প্রচার ও ব্র্যান্ড-ইমেজ গড়ে তুলতে একজন কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তাদেরকে আধুনিক ফ্যাশন ও ডিজাইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণদানের জন্য একজন ডিজাইন কনসালট্যান্ট রয়েছেন। আইটির মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রবেশ ও প্রচার বং জয়িতা-র ব্র্যান্ড-ইমেজ গড়ে তোলা হবে। জয়িতা-র একটি ওয়েভ সাইট (www.joyeeta.com.bd) রয়েছে।
কর্মসূচির মেয়াদ ও বরাদ্দঃ নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রয়াস কর্মসূচি তথায় জয়িতার বাসত্মবায়নকাল ফেব্রম্নয়ারি-২০১১ জুন-২০১৩ পর্যমত্ম । জয়িতা বাসত্মবায়নে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ৭০৫.৭০ লক্ষ টাকা।
প্রত্যাশাঃ ১৬/১১/২০১১ তারিখ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের পর থেকে জয়িতার কার্যক্রম আশাব্যঞ্জক । আশা করা যায় দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বিপণন এবং বাজারজাতকরনের লক্ষ্যে একটি নারী উদ্যোক্তা বান্ধব অবকাঠামো গড়ে তুলতে জয়িতা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা ও আর্থিক সহায়তার জন্য IFIC ব্যাংক কর্তৃক ঋণ প্রদান করা হচ্ছে।
(২) স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতি নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ ও অনুদান বিতরণ
পটভূমিঃ ১৯৬১ সনের ৪৬নং অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী স্বেচছাসেবী সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানসমূহের রেজিষ্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা চালু করা হয়। এ অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী শুরু হতে সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর মহিলা সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান সমূহের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ করেছে । ১৯৭৮ সনের ৫ই এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি নং পি-এস/মবি-৪৬৫/৭৭-২৪০-১৯৬১ এর প্রেক্ষিতে মহিলা স্বেচছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ (রেজিষ্ট্রিকরণ ও নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ (১৯৬১ সালের ৪৬ নং অধ্যাদেশ) এর ক্ষমতাবলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর শুধুমাত্র মহিলাদের দ্বারা গঠিত মহিলাদের জন্য স্বেচছাসেবী মহিলা প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ এবং সমিতিসমূহের মধ্যে বার্ষিক অনুদান বিতরণ করে আসছে। স্মারক নং- সকমবিম/শা-মবি-১/৬ (৪)/৮৯/৬১,তাং- ৩০/৪/৮৯ আদেশ বলে ১৯৮৯ সাল হতে ৬৪ জেলার জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় (বর্তমানে উপপরিচালকের কার্যালয়) থেকে সমিতি রেজিষ্ট্রেশন দেয়া হচ্ছে। এছাড়া অনলাইনে সমিতি নিবন্ধনের জন্য একটি সফটওয়ার প্রস্তুত করা হয়েছে। উক্ত সফটওয়ারে cboreg.dwa.gov.bd এই লিংকে লগ ইন করে অনলাইনে সমিতি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ৬৪ জেলার উপপরিচালকগণের মাধ্যমে স্বেচছাসেবী মহিলা সমিতি নিবন্ধন করা হয়। সমগ্র বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত সমিতির সংখ্যা প্রায় ২০১৭৪টি ।
অনুদান প্রদানঃ দেশের আর্থিক সঙ্গতিহীন কর্মক্ষম মহিলাদের আয়বর্ধণমূলক উন্নয়ন কর্মকান্ডে অধিক সংখ্যায় অংশগ্রহণ ও তাদের আত্মনির্ভরশীল করার লক্ষ্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত মহিলা সমিতি সমূহের মধ্যে বৎসরিক অনুদান বিতরণ করা হয়ে থাকে।
অনুদান প্রদানের উদ্দেশ্য:
(ক) আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে আর্থিক সঙ্গতিহীন কর্মক্ষম মহিলাদেরকে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত ও
তাদের আত্ননির্ভরশীল করা;
(খ) নিবন্ধনকৃত মহিলা স্বেচছাসেবী প্রতিষ্ঠান/সংস্থাকে অনুদানের মাধ্যমে দুঃস্থ, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা,
অবিবাহিতা ও প্রতিবন্ধী মহিলাদের উন্নয়ন তথা পরিবার ও সমাজের উন্নয়ন সাধন করা ;
(গ) সহানীয় মহিলাদের সংগঠিত করে প্রতিষ্ঠান/সংসহা গঠনের মাধ্যমে একত্রে দলগতভাবে কাজ করতে
উৎসাহিত করা;
(ঘ) অনুদানের অর্থের মাধ্যমে সদস্যদেরকে বিভিন্ন আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা এবং
সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান। এতে মহিলাদের একদিকে আত্মর্নির্ভরশীল করা সম্ভব অন্য দিকে
সামাজিক কর্মকান্ডের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ সমাজ গঠন এবং সমাজে মর্যাদা
সহকারে সুন্দরভাবে বসবাসে অধিক সহায়তা করা।
(ঘ) ঘূর্ণায়মান ঋণ তহবিল হিসাবে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে বিশেষ অনুদান প্রদান করা;
স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতি এবং সমিতির মধ্যে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের অনুদান বিতরণ সংক্রান্তঃ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতিগুলোকে অনুদান প্রদান কার্যক্রম পশ্চাদপদ নারী সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ১৯৭৮ সাল থেকে অনুদান বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে দরিদ্র নারীদের কল্যাণে অবদান রাখছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতি সমূহের মধ্যে নিম্নে বর্ণিত অনুদান প্রদান করা হয়েছে।
সাধারণ অনুদানঃ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ৩৫১৭টি সমিতিকে নিম্নবর্ণিত হারে ১০,৬৯,২৫,০০০/- (দশ কোটি উনসত্তর লক্ষ পঁচিশ হাজার)টাকা সাধারণ অনুদান বিতরণ করা হয়েছে।
শ্রেণীর ধরণ |
টাকার হার |
সমিতির সংখ্যা |
টাকার পরিমান |
ক শ্রেণীভূক্ত সমিতি |
৪০,০০০/- |
৯০০টি (৮০০X ৪০,০০০) |
৩,৬০,০০,০০০/- |
খ শ্রেণীভূক্ত সমিতি |
৩০,০০০/- |
১১০০টি (১১০০X৩০,০০০) |
৩,৩০,০০,০০০/- |
গ শ্রেণীভূক্ত সমিতি |
২৫,০০০/- |
১৫১৭টি (১৫১৭X ২৫,০০০) |
৩,৭৯,২৫,০০০/- |
মোট |
৩৫১৭টি সমিতি |
১০,৬৯,২৫,০০০/- |
বিশেষ অনুদানঃ ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে ১২৮ টি সমিতিকে ৫০,০০০/- টাকা হারে (১২৮ X ৫০,০০০/-) =৬৪,০০,০০০/- (চৌষট্টি লক্ষ) টাকা বিশেষ অনুদান বিতরণ করা হয়েছে।
স্বেচ্ছাধীন অনুদানঃ ২০২০-২০২১অর্থ বছরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক ১৩৫টি সমিতির অনুকূলে স্বেচ্ছাধীন অনুদান হিসাবে ৩৫,০০,০০০/- (পঁয়ত্রিশ লক্ষ) টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
(৩) বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র, অঙ্গনা
ভুমিকা: বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশের টেকসই সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে নারী উন্নয়ন। জাতীয় উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় নারীকে সম্পৃক্তকরন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহনের লক্ষ্যে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরাধীন নিবন্ধীত মহিলা সমিতিসমূহের/ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পন্য সামগ্রী বাজারজাত করন ও বিক্রয়ের সহায়তা করার মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র “অঙ্গনা” প্রতিষ্ঠিত হয়।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
অঙ্গনায় যা পাওয়া যাচ্ছেঃ অঙ্গনায় উন্নত মানের বিভিন্ন রকম বেডকভার, নকশী কাঁথা, হাতে কাজ করা শাড়ী, কাজ করা থ্রীপিস, সাধারণ শাড়ী, পেটিকোট, ব্লাউজ, বিভিন্ন ডিজাইনের নানা সাইজের ব্যাগ, পার্স, তোয়ালে, বেবী তোয়ালে, নিউবর্ণ জামা, নেপী, বেবী কাঁথা, লন্ড্রি ব্যাগ, বিভিন্ন ডিজাইনের কুশন কভার, ক্রশের টেবিল ম্যাট, রুটির ঝুড়ি, আয়রন কভার, কিচেন এপ্রোন ইত্যাদি যুগোপযোগী মালামাল পাওয়া যায়।
মালামাল সংগ্রহ:
মূল্য নির্ধারন ও বিক্রয়: যাচাই বাছাই কমিটিকর্তৃক যে সব দ্রব্যাদি গ্রহনের জন্য সুপারিশ করা হয় শুধুমাত্র সেই সব দ্রব্যের ক্রয় মূল্যের সাথে ৫% মুনাফা যোগ করে দ্রব্যাদির বিক্রয় মূল্য নির্ধারন করা হয়।
বিল পরিশোধ: অঙ্গনার মাধ্যমে বিক্রয়কৃত মালামালের বিল অঙ্গনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পরিচালক, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং সহকারী পরিচালক (মার্কেটিং) এর যৌথ স্বাক্ষরে অঙ্গনার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাব হতে A/C Payee চেকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/সমিতি/ব্যক্তিকে পরিশোধ করা হয়। মুনাফার অর্থ প্রতি অর্থবছর শেষে সরকারী কোষাগার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেয়া হয়।
২০২০-২০২১ অর্থ বছরে অঙ্গনার আর্থিক অবস্থাঃ
অঙ্গনার সাফল্য: মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরাধীন বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র অঙ্গনার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তাগন তাদের তৈরিকৃত মালামাল সরবরাহ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে। অঙ্গনার মাধ্যমে প্রতিবছর নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। এভাবেই অঙ্গনা সরাসরি নারী উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ও সরকারের বার্ষিক আয়ে সম্পৃক্ত হচ্ছে।
(৪) দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি(Vulnerable Group Development (VGD) Programme)
২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেট (সংশোধিত): (হিসাব লক্ষ টাকায়)
উপকারভোগী নির্বাচন পদ্ধতি:
খাদ্য বিতরণ পদ্ধতি:
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম:
ভিজিডি কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় রাইস ফর্টিফিকেশন কার্যক্রম:
পুষ্টিচাল বিতরণ সম্পর্কিত তথ্য নিম্নরূপ:
কার্যক্রমের সার্বিক অর্জন/ প্রভাব: প্রতিটি ২(দুই) বছর মেয়াদী ভিজিডি চক্রে প্রত্যেক উপকারভোগী মহিলাকে মাসিক ৩০ কেজি খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি উন্নয়ন প্যাকেজ সেবার আওতায় নির্বাচিত এনজিও’র মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা, আয়বর্ধক ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। চক্র সমাপ্তির পর প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে নিজেদের আয় বর্ধক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে আত্ম-কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। যা সরকারের দারিদ্র দূরীকরন কার্যক্রমে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
(৫) সেলাই মেশিন বিতরণ
নিবন্ধনকৃত মহিলা সমিতি, দুঃস্থ ও প্রশিক্ষিত নারীদের আয়বর্ধক কর্মকান্ডে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট নীতিমালার আলোকে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়।
সেলাই মেশিন বিতরণ সংক্রান্ত বিবরণ
ক্রঃ নং |
বিবরণ |
মোট পরিমাণ |
এ পর্যন্ত বিতরণ |
অবশিষ্ট |
মন্তব্য |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
৬ |
১ |
পুরাতন ভালমেশিন |
২৫৫ |
২৫৫ |
০ |
- |
২ |
পুরাতন সামান্য ত্রুটি |
২১৬ |
১৪৬ |
৭০ |
- |
৩ |
২০০৯-২০১০অর্থ বছর |
৯৬১ |
৭০০ |
২৬১ |
- |
৪ |
২০১০-২০১১ |
১৯৮০ |
৩০০ |
১৬৮০ |
- |
|
মোট= |
৩৪১২ |
১৪০১ |
২০১১ |
|
৫ |
নতুন ক্রয় ২০১১-২০১২ অর্থ বছর |
৩০০১ |
১৩৫৬ |
১৬৪৫ |
|
(৬) মা ও শিশূ সহায়তা কর্মসূচি
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়িত "দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকাল ভাতা" এবং "শহর অঞ্চলের ল্যাকটেটিং ভাতা" উন্নত সংস্করণ "মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি"। জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের আওতায় ০ থেকে ৪ বছরের শিশুর পুষ্টিমান উন্নয়ন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য এই কর্মসূচী পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কর্মসূচিটি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্দেশ্য এবং শিশুদের প্রথম ১০০০ দিনের পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়। গর্ভবতী মহিলারা কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের জাতিয় পরিচয়পত্র, এ এন সি কার্ড এবং পছন্দের অ্যাকাউন্ট তথ্যসহ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে। এই কর্মসূচিটি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (MIS) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত যাচাই বাছাই এর মাধ্যমে ভাতাভোগী নির্বাচন করা হয় এবং G2P (Government to Person) পদ্ধতিতে ভাতা প্রদান করা হয়। গর্ভাবস্থায় এবং নবজাতকের পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গর্ভাবতী ও দুগ্ধদানকারী মা প্রতিমাসে ৮০০ টাকা হারে ভাতা পেয়ে থাকেন যা তাদের অতিরিক্ত খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে করতে সহায়তা করে।ভাতা প্রদানের পাশাপাশি গর্ভাবতী মা ও শিশুর পুষ্টি, নিরাপদ প্রসব ও গর্ভাবতী মা এবং তার পরিবারের সদস্যদের (শাশুড়ি/স্বামী/মা/ননদ) পুষ্টি সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ পরিবর্তনের আনয়নের জন্য উঠান বৈঠকের মাধ্যমে Behavior Change Communication (BCC) প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে এবং এই প্রশিক্ষণটি সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত। গর্ভাকালীন সময় থেকে শিশুর ৪ বছর পর্যন্ত শিশুর যত্ন গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টির জন্য অতিরিক্ত খাবার গ্রহনে প্রতিমাসে মায়ের অ্যাকাউন্টে ভাতার অর্থ হস্তান্তর করা হয়। প্রতি মাসে ভাতার অর্থ প্রদানের ফলে পরিবার গুলো তাদের পুষ্টিকর খাদ্যাবাস গড়ে তুলতে সক্ষম হবে এবং স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ নিশ্চিত হবে। পুষ্টি সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ পরিবর্তনের প্রশিক্ষনের মাধ্যমে সারাদেশে কৃশকায় ও খর্বকায় শিশুর জন্মের হার হ্রাস করার দীর্ঘমেয়াদী ফল হিসেবে প্রসবপূর্ব যত্ন এবং মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে। এর মাধ্যমে বর্তমানে ২০০০০০(দুই লক্ষ) সুবিধা ভোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যারা মাসিক ভিত্তিতে ভাতা সুবিধা পাচ্ছে।
জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল পত্রের দ্বিতীয় ধাপ (২০২১-২০২৬) এর কর্ম পরিকল্পনা অনুসারে ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরে ৬ মিলিয়ন শিশুকে এই কর্মসূচীর অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।