ভূমিকাঃ
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের সংবিধানে সর্বক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ থাকলেও আর্থ-সামাজিক নানাবিধ কারণে নারী ও মেয়ে শিশুরা নানারকম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই বৈষম্যমুলক আচরণের মূলে রয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা। নারী পুরম্নষের তুলনায় অধিক পরিমানে কাজ করলেও তার কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ণ না থাকায় এবং পরিবারে তথা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের সমান অংশগ্রহণ করতে না পারায় তাঁকে সর্বদাই অন্যের উপর নির্ভরশীল থেকে নিগৃহীত হতে হয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তির একটি মাত্র পথ নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ। কিন্তু একজন মা তার ছোট শিশুকে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার নিশ্চয়তা না পেলে সন্তানকে রেখে কাজের জন্য ঘরের বাইরে যেতে পারে না। কর্মজীবী মায়েদের সন্তানকে এই দিবাকালীন সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যাতে মহিলারা স্ব-স্ব কর্মস্থলে নিশ্চিন্তে কাজ করে নিজের তথা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কর্মসুচি প্রকল্পঃ
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কর্মসুচি প্রকল্পটি ১ জুলাই ২০০৯ হতে ৩০ জুন ২০১৪ মেয়াদের জন্য ০১-১০-২০০৯ তারিখে প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করে। এ প্রকল্পের অধীনে ঢাকা শহরে ৭টি নিম্নবিত্তদের জন্য এবং ৪টি মধ্যবিত্তদের জন্য মোট ১১টি ডে-কেয়ার সেন্টার রয়েছে। সেন্টার সমূহ হচ্ছেঃ ৭টি নিম্নবিত্তঃ
৪টি মধ্যবিত্তঃ
প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য:
কর্মজীবী মায়েদের ছোট সন্তানদের (৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়স) সেন্টার থেকে সকাল ৮:৩০ টা থেকে বিকেল ৫:৩০ টা পর্যন্ত নিরাপদ দিবাকালীন সেবা প্রদান করা।
সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য:-
ক) কর্মজীবী মায়েদের ছোট সন্তানদের দিবাকালীন সেবা প্রদানের মাধ্যমে মায়েদের স্ব-স্ব কর্মস্থলে নিশ্চিন্তে কাজ করার সুযোগ দান।
খ) শিশুদের যথাযথ শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য সুষম খাবার প্রদান, ইপিআই প্রতিষেধকসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, প্রাক-স্কুল শিক্ষা প্রদান এবং ইনডোর খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা।
রাজস্ব বাজেটের আওতাধীন শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রঃ
নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী/শ্রমজীবী মহিলাদের শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র:
রাজস্ব বাজেটের আওতায় ঢাকা শহরে ৭টি ও ঢাকার বাইরে পুরাতন ৫টি বিভাগীয় শহরে ৫টি সহ মোট ১২টি ডে-কেয়ার সেন্টার নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী/শ্রমজীবী মহিলাদের শিশুদের জন্য পরিচালিত হচ্ছে।
ঢাকার ৭টি কেন্দ্রের অবস্থান হচ্ছেঃ
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী মহিলাদের শিশুদের জন্যডে-কেয়ার সেন্টার:
রাজস্ব বাজেটের আওতায় ঢাকা শহরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী মহিলাদের শিশুদের জন্য ৬টি ডে-কেয়ার সেন্টার মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। সেন্টার সমূহ হচ্ছেঃ
জেলা পর্যায়ে শ্রমজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র (১ম ও ২য় পর্যায়) শিরোনামে জুলাই ২০০১ হতে জুন ২০০৮ মেয়াদে ১৪টি জেলা শহরে ১৪টি ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়।
সেন্টারসমূহ হচ্ছে:
সেবা:
ডে-কেয়ার সেন্টার হতে শিশুদের দিবাকালীন যে সব সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছেঃ
বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন:
বিভিন্ন দিবস যথা- স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস, মাতৃ-ভাষা ও শহীদ দিবস, আন্তর্জাতিক শিশু দিবসসহ নানা দিবসে শিশুদের অংশগ্রহণে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিশুরা নাচ-গান, কবিতা, আবৃত্তি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায় এখানে।
শিশুদের চিত্তবিনোদন:
ডে-কেয়ার সেন্টার সমুহে শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় খেলার সামগ্রী, টিভি, ডিভিডি ইত্যাদি এছাড়া বছরে একবার শিশুদের ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে বার্ষিক বনভোজনের ব্যবস্থা রয়েছে প্রকল্পে। এতে শিশুরা দিনভর বনভোজনসহ চিত্রাংকন,খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়।
মাদার্স মিটিং
ডে-কেয়ার সেন্টারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতি মাসে মাদার্স মিটিং করা হয়। সেখানে খোলামেলা ভাবে তাদের সন্তানদের যত্ন নেয়ার বিষয়ে সেন্টারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। তাদের কোন অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে তারা কথা বলার সুযোগ পান। মাদার্স মিটিং-এ মায়েদেরকে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা, স্যানিটেশন, পরিবার পরিকল্পনা, বাল্য বিবাহ, সামাজিক সচেতনতা ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান দান করা হয়ে থাকে। তাদের মুল্যবান পরামর্শ বিবেচনায় এনে তা প্রতিপালনের চেষ্টা করা হয়।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------